দিনকাল রিপোর্ট : ঈদের দিন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সাথে সাাৎ না পেয়ে কারাগার প্রাঙ্গণ থেকে ফিরে এসেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। এ সময় বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের দেশনেত্রী এদেশের মানুষের হৃদয়ের মনি বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে অন্যায়ভাবে বন্দি করে রাখা হয়েছে। ঈদের দিনে আমরা তার সাথে দেখা করতে এসেছিলাম। তিনদিন আগে আমরা সাাতের জন্য আবেদন করেছিলাম (আবেদনে চিঠির অনুলিপি দেখান)। নিয়ম আছে, ঈদের দিন বন্দির সাথে দেখা করার। কিন্তু পুলিশ আমাদেরকে এখানে আটকিয়ে রেখেছে। জেল গেটের কাছেও যেতে দিচ্ছে না। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন পর্যায়ক্রমে জোরদার করা হবে বলেও জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। : শনিবার বেলা সোয়া ১২টার দিকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু, আবদুল আউয়াল মিন্টু, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য জয়নুল আবদিন ফারুকসহ কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা কারাগারের কাছে আসেন। মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস ও সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদসহ মহিলা নেতা-কর্মীরাও ছিলেন। কারাগারের মূল ফটক থেকে প্রায় আধা কিলো মিটার দূরে পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে নেতৃবৃন্দকে আটকিয়ে : রাখে। সেখানে হাজারো নেতা-কর্মীও অবস্থান নেয় যারা বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে সেøাগান দেয়। : পুলিশ বেষ্টনীর কাছে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমরা সাাতের জন্য কারা কর্তৃপরে কাছে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পুলিশ কর্তৃপ আমাদের সেখানে যেতে দিলো না। এটা তাদের কাজ নয়। পুলিশের দায়িত্ব ছিলো আমাদেরকে জেল কর্তৃপরে কাছে পৌঁছিয়ে দেয়া। : বিএনপি স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, আমরা অনেকবার জেল খেটেছি, অনেক বছর জেলে থেকেছি। দেখেছি ঈদের দিন আত্মীয় স্বজন, কাছে মানুষদের দেখা সাাৎ করার সুযোগ থাকে, সুযোগ দেয়। এবার যে অমানবিক আচরণ করা হয়েছে, এরকম অতীতে আর কখনো দেখিনি। : এর আগে সকালে শেরে বাংলানগরে দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজারে পুষ্পমাল্য অর্পণ করার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব এই কথা জানান। তিনি বলেন, আমাদের দেশনেত্রীকে সরকার মিথ্যা মামলায় অন্যায়ভাবে কারাগারে বন্দি করে রেখেছে। আমরা আজকে ভরাক্রান্ত হৃদয়ে ঈদ উদযাপন করছি। আমরা আন্দোলনের মধ্যে আছি। আমাদের নেত্রী যে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের কথা বলে গেছেন সেই নিয়মতান্ত্রিক শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে আমরা প্রত্যেকটি স্তরে জোরদার করছি। আমরা মনে করি আন্দোলনের মাধ্যমে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে আমরা মুক্ত করতে পারবো ইনশাল্লাহ। : মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপির কাছে এখন মূল চ্যালেঞ্জ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা। আমরা দেশনেত্রীকে মুক্ত করে একটি নিরপে সরকারের অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে পারবো। কারাগারে অসুস্থ বেগম খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসায় সরকারি অবহেলার সমালোচনা করে অবিলম্বে তার মুক্তি ও অবিলম্বে বিশেষায়িত হাসপাতালে তার চিকিৎসার দাবি আবারো জানান বিএনপি মহাসচিব। : ঈদের দিন জিয়াউর রহমানের মাজার জিয়ারত বিএনপি নেতাকর্মীদের : ঈদের দিন শনিবার সকাল সাড়ে ১১টায় শেরে বাংলা নগরে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলগীরের নেতৃত্বে জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে ফাতেহা পাঠ করেন। এ সময় দলের ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু, আবদুল আউয়াল মিন্টু, অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য জয়নুল আবদিন ফারুক, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন, সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল, শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেইন, সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম খান নাসিম, যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোরতাজুল করীম বাদরু, সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন হাসান, ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মামুনুর রশীদ মামুন, সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান, বিএনপি নেতা কাজী আবুল বাশার, মুন্সি বজলুল বাসিত আঞ্জু, আহসানুল্লাহ হাসান, বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং সদস্য শামসুদ্দিন দিদার, শায়রুল কবির খানসহ কেন্দ্রীয় অঙ্গসংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। : প্রতিবছর ঈদের দিন কূটনৈতিক ও সর্বস্তরের মানুষের সাথে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়ের পর বেগম খালেদা জিয়া জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত করতেন। এরপর তিনি যেতেন বনানীতে ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর কবরে। : ঈদের দিন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন তার স্বজনরা : ঈদের দিন কারাগারে আত্মীয় স্বজনদের নিয়ে বাসার রান্না করা খাবার ‘বিলম্বে’ খেলেন বেগম খালেদা জিয়া। তাদের একান্তে সান্নিধ্যে ‘অন্যরকম’ দিন কেটেছে তার। সাধারণত বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া খাবার খান দুপুর দেড়টার মধ্যে। কিন্তু কারা কর্তৃপ স্বজনদের সাাতের সময় নির্ধারণ করেছে বেলা ২টায়। ফলে অপোয় ছিলেন বেগম খালেদা জিয়া কখন আসবেন তার নিকট স্বজনরা। : জানা গেছে, স্বজনদের অপোয় দুপুর পর্যন্ত অভুক্তই ছিলেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। ঘড়ির কাঁটায় ঠিক সোয়া ২টায় বেগম খালেদা জিয়ার মরহুম ভাই সাঈদ এস্কান্দরের স্ত্রী নাসরিন এস্কান্দার ও তার ছেলে শামস এস্কান্দার, শাফিন এস্কান্দার, ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার, তার স্ত্রী কানিজ ফাতেমা, ছেলে অভিক এস্কান্দার, এরিক এস্কান্দার, ভাগ্নি অরনি এস্কান্দার, অনন্যা এস্কান্দার, শাফিয়া ইসলাম, ভাগিনা সাজিদ ইসলাম, মো. মেহরাব ও মো. আল মামুন প্রমুখ আসেন। আরো আসেন বেগম খালেদা জিয়ার জ্যেষ্ঠ পুত্র তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানের বড় বোন শাহিনা খান জামান বিন্দু, তার স্বামী শফিউজ্জামান। : বিএনপি চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এবিএম আবদুস সাত্তারসহ গুলশানের বাসা ‘ফিরোজা’র গৃহকর্মী ও গাড়ি চালকও সাাতের সুযোগ পেয়েছে। সব মিলে ২০ জন সদস্য কারা ফটক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করেন। বেলা সোয়া ২টায় আত্মীয় স্বজন নিয়ে সর্বমোট ২০ জন সদস্য কারা ফটক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করেন। বেরিয়ে আসেন বিকাল ৪টা ৪০ মিনিটে। পরিবারের সদস্যরা বাসায় রান্না করে খাবার নিয়ে এসেছেন। বেগম খালেদা জিয়া ঈদের দিনে যেসব খাবার পছন্দ করেন সেগুলো তারা রান্না করে এনেছেন। কারাগারে সদস্যদের প্রবেশের আগে ওইসব খাবার ভেতরে নিয়ে কারা কর্তৃপ পরীা করার পর সদস্যদের কারাগারে প্রবেশ করতে দেয়া হয়। বেগুনি সাদা অর্কিডের একটি ফুলের তোড়া নিয়ে আসেন স্বজনরা। এটি দিয়ে বেগম খালেদা জিয়াকে তারা স্বাগত জানান। পরিবারের সদস্যরা জানান, বেগম খালেদা জিয়া বোন ও ভাইয়ের স্ত্রী ও স্বজনদের বুকে জড়িয়ে নিয়ে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। ছোট ভাইসহ তাদের সন্তানেরা বেগম খালেদা জিয়াকে পায়ে ধরে সালাম করেন। এ সময় অনেকে আবেগ প্রবণ হলেও খালেদা জিয়া তাদেরকে ‘আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে ধৈর্য ধারণ করতে বলেন। তিনি স্বজনদের নাম ধরে সকলের খোঁজ-খবর নিয়েছেন এবং বিশেষ করে শিশু-বাচ্চারা কেমন আছে তা জানতে চান। : নিজের ক থেকে অসুস্থ শরীর নিয়ে বেগম খালেদা জিয়া আত্মীয়-স্বজনদের সাথে সাাতের জন্য আসেন। তাকে দুই পাশ দিয়ে দুই জন ধরে নিয়ে আসেন স্বজনদের জন্য নির্ধারিত ক।ে এতো কষ্টের মধ্যেও বেগম খালেদা জিয়া সকলের সাথে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন বলে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। : কারাগারের একাধিক কর্মকর্তার সাথে আলাপ করে জানা গেছে, ঈদ উপলে প্রথম শ্রেণির বন্দি হিসেবে বিএনপি চেয়ারপারসনকে সকালে দুধের সেমাই, জর্দা ও মিষ্টি দেয়া হয়েছে। তার চাহিদা অনুযায়ী দুপুরের খাবার রান্না করা হয়েছে। তবে বেগম খালেদা জিয়া দুপুরেই আত্মীয় স্বজনের খাবার খেয়ে ঈদের দিনটির সূচনা করেছেন বলে জানা গেছে। ঈদের দিন সকাল ১০টা থেকে কেন্দ্রীয় কারাগারের বাইরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। বিএনপির নেতা-কর্মীরা কারাগারের সামনে আসবে- এমন খবরে পরিপ্রেেিত নিরাপত্তা জোরদারের অংশ হিসেবে এই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে পুলিশ কর্মকর্তারা জানান। : গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে ৫ বছরের কারাদন্ড দেয় আদালত। এরপর থেকেই নাজিমউদ্দিন রোডের পুরাতন কারগারে বন্দি রয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া। সঙ্গে রয়েছে তার গৃহকর্মী ফাতেমা বেগম। : ১৯৮১ সালে স্বামী জিয়াউর রহমানের শহীদ হওয়ার পর বিএনপির হাল ধরেন বেগম খালেদা জিয়া। প্রায় তিন যুগের রাজনৈতিক জীবনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলীয় নেতা নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। ঈদে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন বিএনপি নেত্রী। এবার তিনি কারাবন্দি; জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় কারাদন্ডের পর নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কারাগারে তার বন্দিত্ব চার মাস ছাড়িয়েছে। বিএনপি ঈদের আগেই তাদের নেত্রীর কারামুক্তি আশা করেছিল। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়ার ঈদ কাটছে কারাগারেই। দীর্ঘ ৩৬ বছরের রাজনৈতিক জীবনে বেগম খালেদা জিয়া কারা অন্তরীণ অবস্থায় তিন বার ঈদ উদযাপন করেছেন। তবে রাজনৈতিক সরকারের সময়ে কারাগারে তার এটি প্রথম ঈদ। এর আগে ১/১১ সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ২০০৭ সালে ৩ সেপ্টেম্বর বেগম খালেদা জিয়া গ্রেফতারের পর সংসদ ভবনে স্থাপিত সাব জেলে বন্দি রাখা হয়েছিলো। ওই সময়ে দুইটি ঈদ সেই সাবজেলে তিনি উদযাপন করেছেন। : : :
No comments