Header Ads

Loading...

বন্দুকযুদ্ধে টেকনাফের কাউন্সিলর নিহতের ঘটনায় সমালোচনার ঝড়

দিনকাল রিপোর্ট : মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযানে স্বার্থান্বেষী মহল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ভুল তথ্য দিয়ে টেকনাফ উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও পৌর কাউন্সিলর মো. একরামুল হককে হত্যা করিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। একরামুল হক স্থানীয় সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি ও শীর্ষস্থানীয় ইয়াবা কারবারিদের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন, তিনি কোনো কারবারিও ছিলেন না বলে এলাকাবাসী সূত্র জানিয়েছে। এ বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড নিয়ে দেশ-বিদেশে সমালোচনার ঝড় বইছে। এদিকে গত রবিবার রাতে তার জানাজায় হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে। এ ঘটনায় কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মাহবুবুর রহমান চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীর কাছে লেখা এক খোলা চিঠিতে অভিযোগ করে লিখেছেন, একরামুল হককে একজন ত্যাগী নেতা ও আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের সঙ্গী হিসেবে বর্ণনা করেন। মাদক বিরোধী অভিযানকে যখন দেশের আবালবৃদ্ধবনিতা স্বাগত জানিয়েছেন ঠিক তখনই আপনার এই সিদ্ধান্তকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে উঠেপড়ে লেগেছে প্রশাসনের ভেতর ঘাপটি মেরে থাকা একাত্তরের দোসররা, চিঠিতে তিনি লেখেন, তারা ইয়াবাবিরোধী অভিযানের দোহাই দিয়ে আপনার সন্তানকে হত্যা করেছে। : টেকনাফ থানার পুলিশ জানিয়েছে, কাউন্সিলর একরামুলের বিরুদ্ধে ইয়াবাসংক্রান্ত কোনো মামলা নেই। তিনি ইয়াবা কারবারি ছিলেন বলে তাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। উপজেলার আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় দলের নেতারাই বলছেন, একরামুল ইয়াবা কারবারি ছিলেন না, সেটা হলে তারা জানতেন। তিনি অর্থনৈতিকভাবেও তেমন সচ্ছল ছিলেন না। ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আসার পর তিনবার নির্বাচিত এই  কাউন্সিলরের নিহত হওয়ার ঘটনায় এলাকাবাসীর অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করে চলেছে। কোথাও ভুল হলো কি না সে সন্দেহ করছে অনেকে। র‌্যাব একরামুলের নিহত হওয়ার বিষয়ে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত শীর্ষ মাদক কারবারি এবং ইয়াবার শীর্ষ গডফাদার। র‌্যাবের কক্সবাজারের কোম্পানি কমান্ডার মেজর মো. রুহুল আমিন জানিয়েছেন, শনিবার দিবাগত রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মিঠাপানির ছড়া এলাকায় র‌্যাবের সঙ্গে এক বন্দুকযুদ্ধে একরামুল নিহত হন। পরে সেখান থেকে একটি বিদেশি রিভলবার, পাঁচটি গুলি ও ১০ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। জানতে চাওয়া হলে টেকনাফ থানার ওসি রণজিত কুমার বড়ুয়া বলেন, ‘নিহত পৌর কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে ইয়াবাসংক্রান্ত কোনো মামলা নেই। তবে একটি মদের মামলা ছিল, সেটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে।’ ওসি বলেন, ‘একরামুল ইয়াবা কারবারি ছিলেন মর্মে পুলিশের কাছে তেমন কোনো রেকর্ড নেই।’ টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য মোহম্মদ আলী বলেন, ‘টেকনাফের রাজনীতির মাঠে এমপি বদির পরিবার ও সাবেক এমপি গণির পরিবারের দ্বন্দ্ব দীর্ঘকালের। নিহত একরামুল হক ছিলেন বরাবরই এমপি বদিসহ স্থানীয় ইয়াবা ডনদের বিরুদ্ধে সোচ্চার। এ কারণেই একরামুলের মৃত্যুকে সীমান্তের লোকজন সহজভাবে মেনে নিতে পারছে না।’ টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. নুরুল বশর বলেন, ‘পৌর কাউন্সিলর একরাম অত্যন্ত স্বচ্ছতার মাধ্যমে জীবন যাপন করতেন। দলের প্রতি তার আনুগত্য ছিল অত্যন্ত চমৎকার। তার ইয়াবা কারবারে জড়িত থাকার কথা কোনো দিনই শুনিনি। তদুপরি অর্থনৈতিকভাবেও তিনি ছিলেন অত্যন্ত দুর্বল। টেকনাফ পৌর বিএনপির সভাপতি আবদুর রাজ্জাক মেম্বার বলেন, ‘একরামুল ইয়াবা কারবারে জড়িত থাকলে আমরা অবশ্যই জানতাম। কিন্তু কোনো দিন শুনিনি তিনি ইয়াবা কারবারে জড়িত ছিলেন।’ শনিবার রাতে বন্দুকযুদ্ধে টেকনাফ ৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর একরামুল নিহত হওয়ার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে। বলা হচ্ছে, ক্রসফায়ারের নামে ত্যাগী রাজনীতিকদের হত্যা করা হচ্ছে। এসব ত্যাগী রাজনীতিকরা সারা জীবন ইয়াবার বিরুদ্ধে এবং আবদুর রহমান বদির পরিবারের ইয়াবা কারবারিদের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা পালন করে আসছেন। অথচ এক দিন আগে এমপি আবদুর রহমান বদির বেয়াই আকতার কামাল মেম্বারের বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার ঘটনায় ফেসবুকে ‘সঠিক সিদ্ধান্ত’ বলে অনেকে মন্তব্য করেছিলেন। র‌্যাবের দেয়া তথ্যে কাউন্সিলর একরামুলের বাবার নাম ও ঠিকানা না মেলায় অনেকে সন্দেহ করছে, নিরীহ লোক বন্দুকযুদ্ধের শিকার হলেন কি না! র‌্যাব নিহত কাউন্সিলরের বাবার নাম-মোজাহার মিয়া ওরফে আব্দুস সাত্তার এবং তিনি কক্সবাজার জেলার টেকনাফের নাজিরপাড়া এলাকার বাসিন্দা বলে জানিয়েছে। কিন্তু পরিবারের সদস্যরা জানায়, নিহত কাউন্সিলরের বাবার নাম আব্দুস সাত্তার এবং তিনি টেকনাফ পৌরসভার কাইয়ুকখালী (৩ নম্বর ওয়ার্ড) এলাকার বাসিন্দা। টেকনাফ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. শফিক মিয়া বলেন, ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাদকের তালিকায় টেকনাফের মৌলভীপাড়া এলাকার একজন একরামুল হকের নাম তালিকাভুক্ত রয়েছে। তার বাবার নাম ফজল আহমদ। র‌্যাব সম্ভবত সেই একরামুলের নামের মিল থাকায় একজন নিরীহ ব্যক্তিকে বন্দুকযুদ্ধের নামে হত্যা করেছে।’ : শফিক মিয়া বলেন, তিনি একটানা ২১ বছর ধরে টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনকালে একরামুল ছাত্রলীগ, যুবলীগ এবং পরে আওয়ামী লীগে যোগদান করে ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে রাজপথ কাঁপিয়েছেন।  এমন একজন রাজনৈতিক কর্মী ইয়াবার নামে খুনের শিকার হলেন। অথচ রাতারাতি কোটিপতি বনে যাওয়া অগণিত ইয়াবা কারবারি বহাল তবিয়তে রয়েছে। নিহত একরামুলের জেঠাতো ভাই, স্থানীয় সাবেক এমপি আবদুল গনির ছেলে সাইফুদ্দিন খালেদ বলেন, ‘আমার চাচাতো ভাই একরামুল হক বাস্তবে ইয়াবার বিরুদ্ধেই সোচ্চার ছিলেন সব সময়। আমাদের পরিবারের সঙ্গে এমপি বদির পরিবারের সম্পর্কও মোটেই ভালো নেই। এ কারণেই আমার ভাই বলি হলেন কি না আমাদের সন্দেহ।’ : ‘মাদকবিরোধী অভিযান : প্রধানমন্ত্রীর কাছে খোলা চিঠি’ : কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মাহবুবুর রহমান চৌধুরী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে লেখা এক খোলা চিঠিতে অভিযোগ করে লিখেছেন, একরামুল হককে একজন ত্যাগী নেতা ও আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের সঙ্গী হিসেবে বর্ণনা করেন। মাদক বিরোধী অভিযানকে যখন দেশের আবালবৃদ্ধবনিতা স্বাগত জানিয়েছেন ঠিক তখনই আপনার এই সিদ্ধান্তকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে উঠে পড়ে লেগেছে প্রশাসনের ভেতর ঘাপটি মেরে থাকা একাত্তরের দোসররা, চিঠিতে তিনি লেখেন, তারা ইয়াবাবিরোধী অভিযানের দোহাই দিয়ে আপনার সন্তানকে হত্যা করেছে। যার চাল চুলো নেই, থাকার জন্য বাড়ি নেই, পরিবার ও সন্তানদের লেখাপড়া চালানোর জন্য যাকে নির্ভর করতে হয় ভাইদের উপর, বন্ধুদের উপর; আওয়ামী লীগকে ভালবেসে জনগণকে সেবা করতে গিয়ে দেনার দায়ে যার সব শেষ তাকে বানানো হচ্ছে ইয়াবা গডফাদার! হায় সেলুকাস। তবে এসব অভিযোগের ব্যাপারে তাৎক্ষণিকভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বক্তব্য জানা যায়নি। গত ২৬ মে গভীর রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মিঠাপানির ছড়া এলাকায় র‌্যাবের সঙ্গে এক ‘বন্দুকযুদ্ধে’ টেকনাফের তিন নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর একরামুল হক নিহত হন। র‌্যাব বলছে, সেখান থেকে একটি বিদেশি রিভলবার, পাঁচটি গুলি ও ১০ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। একরামুল হকের মৃত্যু সম্পর্কে র‌্যাবের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিকে উদ্ধৃত করে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, ২০১০-১১ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তৈরি মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকায় তার নাম ছিল বলে র‌্যাব দাবি করেছে। কিন্তু একরামুল হকের মৃত্যুর খবর প্রচারের পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। স্থানীয় রাজনীতির সাথে জড়িতরা বলছেন, মি. হক মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত ছিলেন না। সেটা হলে তার আর্থিক অনটন থাকতো না। টেকনাফ থানার ওসি রনজিত কুমার বডুয়া জানান, একরামুল হকের বিরুদ্ধে ইয়াবাসংক্রান্ত কোনো মামলা নেই। অবৈধ মাদক ব্যবসার বিরুদ্ধে র‌্যাব-পুলিশের অভিযানে গত দু’সপ্তাহে প্রায় ১০০ জন নিহত হয়েছে।  কোন নিহতের সংখ্যা এখন প্রায় একশর কাছাকাছি। মাদকবিরোধী অভিযানে নিহত এবং গ্রেফতারের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ‘এসব ক্রসফায়ার’ বা ‘বন্দুকযুদ্ধকে’ বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড হিসেবে উল্লেখ করে মানবাধিকার সংগঠনগুলো এর তীব্র সমালোচনা করছে। সরকারের পক্ষে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা এই অভিযানকে সমর্থন করে বক্তব্য তুলে ধরতে গিয়ে বলেছেন, তরুণ সমাজকে সর্বনাশা ধ্বংসের পথ থেকে ফিরিয়ে আনতে এটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এই অভিযানে দেশের মানুষ ‘খুশি’ হয়েছে বলেও তারা দাবি করছেন। : :

No comments

Powered by Blogger.